২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি / সন্ধ্যা ৬:৪৮

চাঁদে যাবে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা কর্তৃক আয়োজিত আর্টেমিস চ্যালেঞ্জে সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে ‘এটু আই ইনোভেশন ল্যাব’ সকল মানদন্ডে উর্ত্তীণ হয়েছে ও নাসার বিশেষ অর্থায়নে গ্লিমিশনের আওতায় চাঁদে ফেমটো স্যাটেলাইট পাঠানোর ঐতিহাসিক সুযোগ লাভ করেছে। নাসার এ মিশনে সমগ্র বিশ্ব থেকে মোট ২২টি রাষ্ট্র তাদের দেশকে সগৌরবে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছে যার মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

লুনার স্যাটেলাইট বা সংক্ষেপে লুনাস্যাট হলো বিশ্বের সর্বোন্নত, সর্বাধুনিক ও সর্বোকৃষ্ট প্রযুক্তি ফেমটো প্রযুক্তির উপর নির্মিত বিশেষায়িত স্পেস প্রোব। ফেমটো স্যাটেলাইট নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ ডাটা ট্রান্সফার রেট, সর্বাপেক্ষা জ্বালানী সঞ্চয় ও সর্বাধিক লঞ্চ ব্যাজেট সাশ্রয়। স্যাটেলাইটটিতে ওয়্যার ও থ্রু-হোল টেকনোলজি ব্যবহারের পরিবর্তে সারফেস মাউন্টিং টেকনোলোজি ব্যবহৃত হওয়ায় এবং হার্ডওয়্যার হিসেবে বিশেষ প্রকারের সেন্সর, সোলার পাওয়ার ও কমিনিকেশন মডিউল ব্যবহার করায় স্যাটেলাইটির ওজন ও আকার জ্যামিতিক হারে হ্রাস পেয়েছে। 

স্যাটেলাইটের যাবতীয় কাঁচামাল ও রকেটের লঞ্চিং খরচ নাসার কলোরেডো স্পেস গ্রান্ট কন্সোর্শিয়াম বহন করবে। এ ছাড়ানাসা নিশ্চিত করেছে স্যাটেলাইটের মিশন প্লানিং থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট রি-ডিজাইনিং, এসেম্বলি, টেস্টিং, রকেট লঞ্চিং এবং চাঁদে যাওয়ার পর মিশন কন্ট্রোল, ডাটাসংগ্রহ, ডাটা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে সার্বক্ষণিক সহায়তা বজায় রাখবে নাসা। 

বিভিন্ন অ্যাডভান্স ডাটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং এলগরিদম ব্যবহার করে চাঁদে স্থায়ী মানবসভ্যতা বিকাশের উপায় ও করণীয় খুঁজে বের করা হবে। এছাড়া চাঁদে কৃষি কাজ, ঘরবাড়ি, রাস্তা ঘাট ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করবে স্যাটেলাইট ডাটা বিশ্লেষণ। 

এর মাধ্যমে এটুআই বাংলাদেশের জন্য তিনটি ইতিহাস করতে চলেছে। প্রথমত, চাঁদের বুকে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের প্রথম গভীর মহাকাশ মিশন। তৃতীয়ত, প্রথম স্যাটেলাইট যা বাংলাদেশে এসেম্বলি ও প্রোগ্রাম করা হবে। 

নির্বাচিত প্রকৌশল দল গুলোর কাছে ফেমটো স্যাটেলাইট (লুনারস্যাটেলাইট) তৈরির উপকরণ ফেডেক্সের মাধ্যমে নাসা ইতিমধ্যে ইশিপমেন্ট করেছে।কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ডাক যোগে ফেডেক্স থেকে নাসার রেজিস্টার্ড টিম মেন্টর নাহিদ সুলতানা মল্লিক, যুগ্ম-প্রকল্পপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এর নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। গত ১৮ অক্টোবর এয়ারপোর্টের কাস্টমস অফিস থেকে স্যাটেলাইট কিট গুলো গ্রহণ করা হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে, নাসার আর্টেমিস চ্যালেঞ্জের জন্য এটুআই ইনোভেশন ল্যাব থেকে নাহিদ সুলতানা মল্লিক, যুগ্ম-প্রকল্পপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মহোদয়ের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় ও আইল্যাবে কর্মরত জাহিদ হাসান শোভন (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী) এর নেতৃত্বে নাসাতে স্যাটেলাইটের উপর একটি প্রজেক্ট প্রোপোজাল জমা দেওয়া হয়। 

সমগ্র বিশ্ব থেকে নাসার সকল মানদন্ডে উর্ত্তীণ ২১৩ টি প্রজেক্ট নাসার আর্টেমিস গ্রান্ট লাভ করে ও অর্জন করে ইতিহাস গড়ার সুযোগ।
এ মিশনে যথাযথ ভাবে কাজ করার লক্ষ্যে অংশ গ্রহণকারী দল গুলোকে প্রস্তুত করার জন্য একটি অনলাইন ওয়ার্কশপ তথা বিশেষ ট্রেইনিং এর আয়োজন করেছে নাসা।

বর্তমানে ফ্লাইট ভার্সন লুনা স্যাট নিয়ে কাজ নাসার গ্লিপ্রোগ্রাম স্টাফরা কাজ করছেন ও আগামী ২০২৩ সালের প্রথম কোয়ার্টারে আরো একটি মডিউল প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছে । এটিই বিশ্বব্যাপী গবেষণা প্রবণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাসার প্রথম চন্দ্র অভিযান। 

রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে প্রযুক্তি নির্ভর মহাকাশ প্রশাসন অন্তত্য গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মহাকাশ খাতে বাংলাদেশের স্বাক্ষর বহন করবে ও বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনবে নতুন নতুন সম্ভাবনা। আগামীতে মহাকাশ মিশন পরিচালনার জন্য উন্নত অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পলিসিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করবে নাসার গ্লিমিশনে বাংলাদেশের অর্জিত অভিজ্ঞতা।