১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি / রাত ৮:০২

দু‘জন অবিস্মরণীয়,সৃষ্টিশীল মানুষ- কে স্মরণ

বইমেলার দিনলিপি

ঈদের খুশির মতো আনন্দটা ছড়িয়ে পড়ল। মাইকে ঘোষণা এলো। বইমেলার আয়ু বাড়ল আরও দুইদিন। স্টলে স্টলে সবার আনন্দের খুশি। প্রকাশকদের চেয়ে বেশি খুশি কেউ আর হবে না। এটা নিশ্চিত। তবে পাঠকের মিলনমেলা। লেখকের প্রিয় পদচারণভুমি। এ যেন নতুন করে গেয়ে ওঠল –

‘‘ ফুরিয়ে যাবার পরও, তুমি
আকাশেরে করো আলিঙ্গণ-
এ ধরা তোমারই প্রাতে,
মেঘমালা, তুমি যত দুরে যাও সরে,
আমিও, তোমারই মতন-
এক টুকরো মেঘ …”

আকাশ আর মেঘেরই মতো। বই পাঠক আর প্রকাশকের যে হৃদ্যতা। এই আত্মিক অনুভূতি শুধু বইমেলাতে আসলেই অনুভব হয়। বলা যায়। আরও দু’দিন এই পরিবেশটা টিকে থাকল। কাল ১৪ই ফাল্গুন ১৪৩০/২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার। অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩:০০টায় এবং চলল রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। কাল নতুন বই এসেছে ৯৫টি। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : সেলিম আল দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রশীদ হারুন এবং জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা নাটকের ইতিহাসে সেলিম আল দীনের অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অস্থির পরিস্থিতিতে প্রকৃত বাস্তবকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে উপস্থাপন করাকেই তাঁর কর্তব্য বলে মনে করেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক চিত্র তাঁর নাটকে মূর্তরূপ লাভ করেছে। নাটক রচনাকালে তাঁর চেতনার ভূগোল তৈরি হয়েছে সমগ্র প্রকৃতি, মানুষ, জনপদ, জীবন এবং গ্রামীণ ও নাগরিক সমাজের বিদ্যমান দ্বন্দের প্রেক্ষাপটে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, সচেতন নাট্যকার হিসেবে সেলিম আল দীন সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারেননি। তাঁর নাটকের ভেতর সমকালীন বাস্তবতার চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। সমাজ-চেতনা এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেলিম আল দীনের নাটকেও বিবর্তন এসেছে। তিনি এ অঞ্চলের শিল্পরীতি ও শিল্পদর্শনকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে চালিত করেছেন এবং বাঙালির নাট্য- সংস্কৃতি ও নাট্যযাত্রার পথকে সুগম করার জন্যে আজীবন কাজ করে গেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, সেলিম আল দীন রাজনীতি ও মানুষকে একীভূত করে তাঁর নাট্যভূমি নির্মাণ করেছেন। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতবাদের পক্ষাবলম্বন না করে শিল্পীর নির্মোহ অবস্থান থেকে তিনি নাট্যচর্চা করেছেন।
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে আজ ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বিকেল ৫:০০টায় হুমায়ুন আজাদ দিবস পালন উপলক্ষ্যে লেখক-পাঠক ফোরামের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের সামনে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। বিশিষ্ট প্রকাশক ওসমান গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বক্তৃতা প্রদান করেন কবি মোহন রায়হান, কবি আসলাম সানী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাঁর আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাঁকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।
আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রেজানুর রহমান, শিশুসাহিত্যিক মানজুর মুহাম্মদ, কবি রণক মুহম্মদ রফিক এবং গবেষক অমল গাইন। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে আজ বিকেল ৫:০০টায় বাংলা একাডেমি লেখক পর্ষদের উদ্যোগে সাহিত্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রওশন ঝুনু, হাসনাইন সাজ্জাদী, মাহী ফ্লোরা এবং মোস্তাফিজুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী পারভেজ চৌধুরী, কুমার লাভলু, নাজমুল আহসান এবং মুজাহিদুল ইসলাম। এছাড়া ছিল সালাউদ্দিন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী’, মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘দৃষ্টি’, মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’ এবং মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী লিলি ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, চঞ্চল খান, অণিমা রায়, কামাল আহমেদ, আশরাফ মাহমুদ, সালমা চৌধুরী, মীরা মষ্লড, ঝুমা খন্দকার, শেলী চন্দ, ইরাবতী মণ্ডল এবং সেলিনা আলম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কী-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং রিচার্ড (গীটার)। আজ অমর একুশে বইমেলার ২৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩:০০টায় এবং চলবে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : মুনীর চৌধুরী এবং স্মরণ : হুমায়ুন আজাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে ফিরোজা ইয়াসমীন এবং হাকিম আরিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবদুস সেলিম, ইউসুফ হাসান অর্ক, ওসমান গনি এবং মৌলি আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি


তথ্যসেবা: সমীর কুমার সরকার
পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ
বাংলা একাডেমি।

রাতের বইমেলার ছবি: মো. জসিম (শিল্পী)