২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি / সকাল ৭:৪৮

নাসিরাবাদ সেতু ৭৫ নং ওয়ার্ডের এক নতুন মাইল ফলক :

৭৫ নং ওয়ার্ড, ডিএমসিসি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল – ৬ এর অন্তর্গত। আগে এই ওয়ার্ড ছিল নাসিরাবাদ ইউনিয়ন। ২০১৭ সালে এই ইউনিয়ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলে এলাকার পথ, ঘাট, সাঁকোসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজের ধারা অব্যাহত থাকে। খিলগাঁও থানার আওতাধীন এই ওয়ার্ড ঢাকা -৯ আসনের অন্তর্গত। ইদারকান্দি, ফকির খালী, বালুর পাড়, বাবুর জায়গা, দাসেরকান্দি, জোড়ভিটা, ত্রিমোহনী পূর্ব পাড়া, লায়ন হাটি, ত্রিমোহনী, ইমামবাগ, উত্তর গাঁও, টেকপাড়া, গৌরনগর, ইসলামবাগ, নাসিরাবাদ, শেখের জায়গা, নাগদারপাড়,  ভাইগদিয়া ইত্যাদি এলাকার সাথে এই ওয়ার্ডের সংযোগ।

স্থানীয় এমপি জনাব সাবের হোসেন চৌধুরীর জন্যও একটি জনপ্রিয় এলাকা। এমপি সরকার দলীয় হলেও, কাউন্সিলর, আকবর হোসেন কিন্তু বিরোধী দলীয় প্রার্থী। তারপরও এলাকার উন্নয়ন পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ‘রাজনীতি’ উন্নয়নের পথ বাধাগ্রস্ত করেনি। এলাকার জনৈক যুবক বিষয়টি তুলে ধরলোঃ- ‘‘ ওয়ার্ডের মজার ব্যাপারটা হচ্ছে, আকবর হোসেন ইউনিয়ন পরিষদ থাকতে চেয়ারম্যানও ছিলেন, আবার বিপক্ষদলের তোফাজ্জল সাহেবও কিছুদিন কাউন্সিলরও ছিলেন। গত কাউন্সিলর নির্বাচনের ফলাফলে এই আসনটিই ছিল ব্যতিক্রম। বর্তমান কাউন্সিলরের ভাই, সাবেক একে এম  চেয়ারম্যানের (মৃত) জনপ্রিয়তাই আওয়ামী প্রার্থী – তোফাজ্জল হোসেন, এই ওয়ার্ডের বি এন পি মনোনীত প্রার্থী, আকবর হোসেনের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে দু’জন ভিন্ন মতাদর্শী হলে, এলকার উন্নয়ন ভাবনা ও জনগণের উন্নয়নে দু’জন একযোগেই কাজ করছেন। এই আন্তরিকতা শুধু বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নন। আত্মীয়তার দিক থেকেও দু’জন একই এলাকার ও একই বংশগত সম্পর্কের মানুষ। এবং এলাকার প্রাণ। এর নজির আপনারাও দেখছেন। কিভাবে এলাকাবাসীর জন্য সবাই মিলেমিশে খুব দ্রুত রাস্তাঘাট ও  নাসিরাবাদে এখন নতুন একটি সেতু নির্মাণ করে দেখালো ? ’’

গৌরনগরের ভেতর দিয়ে ঘুরে নাসিরাবাদে সদ্য নির্মিতব্য ব্রিজটিতে এসে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, নাসিরাবাদ- নড়াই নদীর ওপর এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ। দীর্ঘ ৩ বছর প্রাকৃতিক নানান প্রতিকুলতা পেরিয়ে সম্পুন্ন হয়েছে নবনির্মিত একটি ব্রিজ। যার নাম নাসিরাবাদ ব্রিজ। আপাততঃ ফুটওভার ব্রিজ বলা চলে। ঠিক বালু নদীর ওপর নির্মিত। সেতুর এক পাশে নাসিরাবাদ গজারিয়া। অন্য পাশে দাসেরকান্দি। নাসিরাবাদ নতুন পাড়া হয়ে সেতুটি চলে গিয়ে ‘ইউ টার্ন’  নিয়ে বালুর পাড়ে এসে যুক্ত হয়েছে। গিয়েছে বাবুর জায়গা- মাজিন (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ) সড়ক। নাসিরাবাদ ব্রিজটি হওয়া নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বেশ কথাও হলো । বেশিরভাগ এলাকাবাসী জানালো, এই সেতুর ঢালু থেকে নেমে মোস্তম মাঝি – স্টাফ কোয়ার্টার রোড, কিংবা মেড়াদিয়া হাট বাজারের সাথে এলাকার মানুষের- চলাচল ও  বাণিজ্যিক কাজের জন্য, অদ্য ত্রিমোহনী অঞ্চলে একটি নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। নতুন সড়কের সাথে যে দুটি নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। সরজমিনে দেখা গেলো, ইট বিছানোর কাজ ব্রিজের ঢালে কিছুটা এসে থেমে আছে। এলাকার ‘মাতব্বর’ নামের জনৈক মুরুব্বি নিজেও ঠিক ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়েই কথা বললেন; ‘‘ আমরা আওয়ামী লীগ- বি এন পি বুঝি না, আমরা চাই ব্রিজ যেভাবে শেষ হয়েছে। রাস্তাঘাটের কাজগুলাও তাড়াতাড়ি শেষ হবে। দেখলেন তো, বৃষ্টির সময় রাস্তার কি অবস্থা হয়? ’’ গৌরনগরের আমিরুলেরও প্রত্যাশা; ‘‘মেন রোড গুলোর দিকে নজর দিলেই হবে না। ব্রিজের বামে যে বালুর রাস্তা গৌরনগরের দিকে গিয়েছে। এই রাস্তাটাও পাকা করা জরুরি। এই রাস্তা একদিকে নাসিরাবাদ প্রধান ব্রিজ (ঘাটলার ব্রিজ) থেকে অটোতে নাসিরাবাদ টু গৌরনগর টু মোস্তম মাঝি মোড়ে গিয়ে মিলেছে। এই রাস্তা ছাড়াও গৌর নগর মসজিদ, মাদ্রাসার আশে পাশের ভেতরের রাস্তাগুলোর অবস্থা কিন্তু বেশ শোচনীয়। ’’ আমিনুলের বক্তব্যের সাথে স্ব-শরীরে এলাকার ভিতরের রাস্তাগুলো মিলিয়ে দেখার চেষ্টায় যা বোঝা গেলো – ভিতরে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও বাহিরের অনেক শিক্ষিত পরিবারও গৌরনগর ও নাসিরাবাদে জায়গা জমি কিনেছে। অনেকে বাউন্ডারী করেও রেখে গেছে যার যার সম্পত্তি।তবে, বেশির ভাগ জমিই পরিত্যক্ত। এর প্রধান কারণ বোঝা গেলো – এলাকাগুলোর ভেতরের রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। এটা বলা যায়, রোড ঘাট ভালো হলে দেয়াল করে রেখে যাওয়া অনেকেই এখানে  নিশ্চিত এসে ঘরবাড়ি করে বসবাস করবে। শুধু ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ দিয়ে এলাকায় শিক্ষিত জনসমাজ গঠন সম্ভব নয় ? পথঘাট ভালো ও পরিবেশ সুন্দর হলেই মানুষজন খুব দ্রুত যে যার জায়গায় বাড়ি করে এখানে স্থায়ী বসবাসের জন্য চলে আসবে। তাই, সবার আগে প্রয়োজন রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ ও সংস্কার। নাসিরাবাদ নতুন ব্রিজ এলাকার উন্নয়নের রোল মডেল বলে বিবেচিত হলেও ; আধুনিক যুগে ত্রিমোহনী প্রধান ব্রিজের বামে ‘কাঠ বাঁশের সাঁকোতে’ শত শত মানুষের ঝুঁকি নিয়ে পাড়াপাড়ের দৃশ্যটি কিন্তু মনে যে কারুরই খটকা লাগাবে ? নাসিরাবাদ নতুন সেতুটির কাজ শেষ হলো বটে। এখন দেখার অপেক্ষা। নাসিরাবাদ নতুন পাড়া, ত্রিমোহনীর নদীর মোহনার ওপর বাঁশ কাঠের এই সাঁকোটিরও  একটি স্থায়ী সমাধান হয় কি না ?

মারুফ আহমেদ (বিশেষ প্রতিনিধি)