২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ১২ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি / রাত ৩:১৭

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আবারও বেড়েছে

বাজারে আবারও বেড়েছে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে নতুন করে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের সংখ্যা অন্তত ২০টি। রোজার আগে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া বেগুনের কেজি এখনও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শিম। এছাড়া রাজধানীর বাজারগুলোতে হুট করে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে গাজরের দাম। এক লাফে গাজরের দাম বেড়ে তিনগুণ হয়ে গেছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা গাজরের কেজি বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে গাজরের কেজি ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া বাজারে পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সজনে ডাঁটা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা। পালং শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। শৌল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়।

মসলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে এলাচের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এই পণ্যটি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩২০০ টাকা কেজি দরে। এই সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৩৬০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০০ টাকার মতো। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এলাচের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

বাজারে মসলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে তেজপাতার দামও বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি তেজপাতার দাম ছিল ১৯০ টাকা কেজি। এই সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২০০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে তেজপাতার দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

নতুন করে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডানো। ব্যবসায়ীরা ৭০০ টাকা কেজি দরের ডানো দুধ বিক্রি করছেন ৭১০ টাকা কেজি দরে। গুঁড়া দুধ ডিপ্লোমার (নিউজিল্যান্ড) দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিপ্লোমা। ব্যবসায়ীরা ডানোর মতো এই দুধ বিক্রি করছেন ৭১০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফ্রেশ। ব্যবসায়ীরা এই দুধ বিক্রি করছেন ৬১০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই দুধের দাম ছিল ৬০০ টাকা কেজি।

মার্কস ব্র্যান্ডের দুধের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এই দুধ বিক্রি করছেন ৬৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই দুধের দাম ছিল ৬৪০ টাকা কেজি।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটা কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা কেজি দরের আটা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে প্রায় চার শতাংশের মতো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত ময়দা কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ৫৮ টাকা কেজি দরের ময়দা শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশের মতো।

বাজারের তথ্য বলছে, শুক্রবার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা লিটার দরে। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৫২ টাকা প্রতি লিটার। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ১০ টাকা। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

এ সপ্তাহে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন। শুক্রবার ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৭৪৫ টাকা থেকে ৭৫০ দিয়ে। আর এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে হচ্ছে ১৭০ টাকায়। দুই লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা দরে।

যদিও সম্প্রতি সয়াবিন তেলের উৎপাদন, খুচরা ও এমনকি আমদানি পর্যায়ে সরকার মোট ৩০ শতাংশ কর ছাড় দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সয়াবিনের দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু এক মাস না যেতেই আবারও বাড়তে শুরু করেছে সয়াবিন তেলের দাম।

শুক্রবার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৪৮ টাকা লিটার। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা পাম অয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে ১০ টাকা।

বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ ক্রেতাদেরকে এ সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ।

দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকার মতো। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে দেশি ও আমদানি করা রসুনের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে ৯০ টাকা কেজি দরের দেশি রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ১২০ টাকা কেজি দরের আমদানি করা রসুন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।

গরুর মাংসের দাম আবারও বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া গেলেও এই সপ্তাহে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

গরুর মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে মুরগির মাংসের দামও। ৫৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ রসুনের মতো বেড়েছে শুকনো মরিচের দামও। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ১৬০ টাকা কেজি দরের শুকনা মরিচ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খবর: বাংলা ট্রিবিউন