২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি / রাত ৯:১৬

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ২৪ বছর সংগ্রাম করেছেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য দীর্ঘ ২৪ বছর সংগ্রাম করেছেন। 

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম সবক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, সব সময় দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা পূর্ব বাংলার জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে শুরু করে প্রহসন। 

সোমবার (১০ জানুয়ারি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের এক জনসমুদ্রে ঘোষণা করেন ‘….প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো।…. এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি-ত্রিশ লাখ শহীদ ও দু’লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখব। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে এক কালজয়ী মহাপুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পায়। মহান নেতার আগমনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের আনন্দ পরিপূর্ণতা লাভ করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে প্রেরণ করে এবং তার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাতে থাকে। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালতে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতেও তিনি বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তার অবিচল নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। একই দিন সকালে তিনি লন্ডনে অবতরণ করেন, সেখানে কমনওয়েলথ মহাসচিবের আহ্বানে বাংলাদেশের সদস্যপদ গ্রহণে তাৎক্ষণিক সম্মতি জানান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করেন। জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি সকালে দিল্লিতে যাত্রা বিরতি দিয়ে দুপুরে তার প্রিয় মাতৃভূমিতে পদার্পণ করেন। ওইদিন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে এক ভাষণে তিনি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ভয়াবহ ও নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন, সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা সংগঠনের দায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখী করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ১৫ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তিনি একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। জাতির পিতার সফল দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশ বিশ্বের ১২৩টি দেশ এবং ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করে। তারা ’৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। মোস্তাক-জিয়া চক্র খুনিদেরকে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে কূটনীতিকের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে, রাজনৈতিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত করে। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। বিএনপি-জামায়াত সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা একই বছরের ১২ নভেম্বর ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ প্রণয়ন করে জাতির পিতা হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পুস্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরি। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ‘দিনবদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করি এবং পরপর তিন দফা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি। আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছি। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়া সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।