৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি / সকাল ৬:২৫

শতবর্ষেও এটিএম শামসুজ্জামানের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না’

৪৫ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন দুজনে। ১৯৭১ সালে ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের সূত্র ধরে পরিচয়। তখন থেকেই ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় এটিএম শামসুজ্জামান এবং সোহেল রানার। কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুর খবরটি কিছুইতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এই প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। বিশ্বাস করতে পারছেন না, এটিএম শামসুজ্জামান নেই! বললেন, শতবর্ষেও এটিএম শামসুজ্জামানের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। হয়তো এটিএম শামসুজ্জামানের অভাব পূরণ হবে কিন্তু অজাতশত্রু এটিএম শামসুজ্জামানের অভাব কখনও পূরণ হবে না। সে তুলনাহীন ছিলেন। মানুষ, শিল্পী, লেখক, গল্পকার হিসেবে তার সঙ্গে কারোর তুলনা করা যেতো না।

একজন সত্যিকারের মানুষ ছিলেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার এ টি এম শামসুজ্জামান। অভিনয়ের জন্য পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তার মৃত্যুতে শোকাহত সোহেল রানা। অজাতশত্রু ব্যক্তি এক ব্যক্তি ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান এমন কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রাঙ্গনে যাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তার মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল একদম। উনি শিল্পী হিসেবে কোন মানের ছিলেন সেটা তো সবাই জানে। বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি বলবো কি। সারা বাংলাদেশ বলবে। তার কাছাকাছি থেকে যেটা বুঝতে পারছি অজাতশত্রু ব্যক্তি ছিলেন। যে তার সংস্পর্শে এসছে সেই তার বন্ধু হয়ে গেছে। তার কোনো শত্রু ছিল না। এ টি এম শামসুজ্জামান ব্যক্তিজীবনে বেশ ধার্মিক ছিলেন। এই অভিনেতা ১১ বার হজে গিয়েছিলেন। একবার একসঙ্গে সোহল রানার সঙ্গেও হজ পালন করেন। সেই স্মৃতি মনে করে সোহেল রানা বলেন, ওনার সাথে কাটানো সব মুহুর্তই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে এখন একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে, আমরা একসঙ্গে হজ পালন করেছিলাম। ওই বছর তিনি হজ করতে যাবের এটা জনাতাম না। উনি নারিন্দার পীর সাহেবের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ৩০ জনের মতো একটা কাফেলা করে। জেদ্দা এয়ারপোর্টে নেমে হঠাৎ করে তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। পরে আমাকে উনি জিজ্ঞেস করে, আপনি কোন কাফেলার সঙ্গে আসছেন? পরে বললাম, কারোর সঙ্গে আসিনি। একা একা এসেছি। আল্লাহ যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাবো। এই কথা বলার পরে বললেন, আমাদের সাথে আসেন। তখন গেলামও। এই যে আমাকে নিয়ে তার কাফেলার সঙ্গে যুক্ত করলেন। নামাজ পড়া থেকে শুরু করে সবকিছু একসাথেই করতাম। এটাই সবথেকে বেশি মনে পড়ছে এই মূহুর্তে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন এ টি এম শামসুজ্জামান। শুটিংয়ের স্মৃতি মনে করে সোহেল রানা আরও বলেন, প্রচুর আড্ডা দিতাম আমরা। মেকআপ রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতাম। এমন কোনো ব্যাপার ছিল না যে তার সঙ্গে আলাপ করা যেতো না। সাধারণ গল্প থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিখ্যাত উপন্যাস সম্পর্কে তার প্রচন্ড রকম একটা দখল ছিল। অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। সবশেষ এই অভিনেতা বললেন, সবসময়ই হাসিমুখে থাকতেন এটিএম শামসুজ্জামান। মুখের মধ্যে হাসিটা লেগেই থাকতো। ওনার কথা বলে শেষ করা যাবে না।