১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি / রাত ১২:৫৫

সবুজবাগ থানাধীন হাজার মুসুল্লির বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়

৭৬ বছরের ইতিহাসে সব্বোর্চ তাপমাত্রার রেকর্ড স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। এই এপ্রিল মাস থেকেই প্রচন্ড তাপদাহ সারা বাংলাদেশের মানুষকে গরম বাতাসের তেজ যে কি হতে পারে, সেটাই বুঝিয়ে ছাড়ল। গ্রামের কথা বাদই দিলাম। উন্নয়নের গহব্বরে সারা বাংলার পথে প্রান্তরের সবুজ গাছপালা আজ এক প্রকার বিলীন। যত গাছ কাটা হয়েছে। তার এক আনাও গাছও সরকারি বেসরকারিভাবে কেউ রোপন করেনি। তাপমাত্রা যে সামনে দেশবাসীর জন্য আরও নাভিশ্বাসের কারণ হবে না। সেটা সারা দেশের আপামর মানুষগুলো যে যার ধর্মীয় বলয় থেকে সৃষ্টার কাছে কান্নাকাটি করেই বুঝিয়ে দিচ্ছে! ঢাকা শহরের ষোল আনা টিনের বাড়িগুলি আগে আম জাম কাঁঠাল লিচু সজনে জামরুল ডাব গাব আরও কত কী গাছের বাগানে বাগানে বাতাসের দোলে থাকত মুখর। কত গাছ গাছালি ছিল গরমে পাখির আবাস ভুবন। জমির ও বাড়ির মালিক সুউচ্চ দালানের স্বপ্নে গাছ বাগান সব শেষ করে একের পর এক শহরে গড়ে তুলেছে সুউচ্চ বাড়িঘর। আর ডেভলপার কর্তৃক বিলীন হয়েছে আরও হাজার হাজার ঘর বাড়ির সবুজ বাড়ির আঙিনা! এখনও যেসব বাড়িতে কিছু গাছ পালা দেখা যায়। এগুলোও চলে যাবে বড় বড় দালান কোঠার গহব্বরে…বাতাস কমে যাচ্ছে। ফলে অতি মাত্রায় বেড়েই চলেছে দেশের তাপমাত্রা। যতই গাছ কাটা হবে। ততই বাড়বে আগুনমুখো বাতাসের আজাব। আবহাওয়াও এখন বিরূপ ব্যবহার করছে আমাদের বাঙালী জাতির সাথে। আগে পহেলা বৈশাখ আসার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেতো কালবৈশাখী ঝড়সহ প্রচুর বৃষ্টিপাত। গরম দেখতাম আম কাঁঠাল পাখার বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে। এখন আর আম কাঁঠালের জৈষ্ঠের অপেক্ষা নাই। গরম যেন চরম আকার ধারণ করে সারা দেশবাসীর ওপর প্রাকৃতিক প্রতিশোধে নেমেছে! ইসলাম ধর্মেই আছে- যত আজাব গজব এগুলো সব আমাদের মানুষের পাপের কামাই। আমাদের পাপের জন্যই প্রকৃতির এমন রূঢ় আচরণ। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় এমন কোন দিন নেই ৩৯ ডিগ্রী ছিল না। ৪০ ও ছাড়িয়েছে! ঢাকার বাইরের জেলা বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, চিটাগং ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর রেড এলার্ট চলছে প্রচন্ড গরমে। যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তো ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। ঈশ^রদি, সিলেট, খুলনা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা , টাঙ্গাইলসহ আরও বিভিন্ন অঞ্চলে ছিলো ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে খুশির খবর ২৬ এপ্রিল ৩৬০ আওলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট মৌলভীবাজার জেলায় রাতে রহমতের বৃষ্টি হয়েছে খুব। সেখানের প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে জানা যায় মানুষ সৃষ্টার কাছে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বস্থির এই বৃষ্টির ছবি ও ভিডিও যে যার মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয়জনদের শেয়ার করছে। রহমতের বৃষ্টি বলে কথা। কিছুদিন আগেও প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়েছিলো। তবে ঢাকায় শেষ বৃষ্টি হয়েছে প্রায় মাস দেড়েক আগে ১৯ শে মার্চ। গ্রামের চেয়ে ঢাকার অধিবাসীরা সাধারণতই একটু বেশি নাজুক ও কষ্টক্লেশ সহ্যকারী কম। আরাম প্রিয়ও বলা যায়। এসির আরামে আর কতজন ঢাকাবাসী এই গরমকে প্রতিরোধ করতে পারছে? প্রকৃতির বাতাস যেখানে গরম, সেখানে প্রচন্ড তাপদাহ কমাতে বৃষ্টির কোন বিকল্প নাই। গতকালও সরোজমিনে ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন চায়নার উত্তরে দাসেরকান্দী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষ জলদি জলদি পাকা ধান মাড়াচ্ছে। কেউ কেউ সিদ্ধ করছে। রোদে শুকাচ্ছে। ধান কাটার পর জমিগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে। দুদিন আগের এসব জমিন ছিল ইরি ধানের মাঠ। বৃষ্টির অভাবে প্রচন্ড তাপদাহে মাটি এখন ফেটে ফেটে ‘হা’ করে আছে আকাশের পানে! সৃষ্টার অশেষ নেয়ামতের বৃষ্টি ছাড়া এই ধরা আর শীতল হবে না। প্রকৃতি চুপসে আছে। ধান ছাড়া অন্যান্য ফসল শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ঘরের শিশু, বয়স্ক মানুষগুলোর জন্য এই গরমের কি যে অশান্তি বলার অপেক্ষা রাখে না। পথে প্রান্তরে রিকশা ভ্যানের চালক থেকে অন্যান্য শ্রমিকের ঘল্মাক্ত জামার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে অসহায় গরীব মানুষদের ভেজা শরীরের কষ্ট টুপ টুপ করে কিভাবে ঝরে পড়ছে। কত মানুষ হিটস্ট্রোকে মারাও গিয়েছেন। সেই নবী রসুলদের আমল থেকেই যে কোন বিপদে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবাই মিলে জমায়েত হয়ে বিপদ থেকে মুক্তি চেয়ে প্রার্থনা করেছে রবের কাছে। সবুজবাগ থানার আওতাধীন সম্মিলিত ওলামায়ে পরিষদও এই কঠিন সময়ে সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টির জন্য নামাজের বিষয়টি অনুধাবন করেছে। এবং সবুজবাগ থানার আওতাধীন প্রতিটি মসজিদে মসজিদে জু’মার নামাজে সারা দেশবাসীর কষ্টের কথা বিবেচনা করে এই নামাজের কথা বলা হয়। এই প্রেক্ষিতে আজ ২৭ এপ্রিল মাদারটেক আব্দুল আজিজ স্কুল এন্ড কলেজের ঐতিহাসিক ঈদগাহ মাঠে সকাল ১০:১৫ মিনিটে সবাই একসাথে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করেন। সবুজবাগ এলাকা ছাড়াও আশে পাশের অনেক মানুষ আকুল চিত্তে চোখে পানি ফেলে নামাজ শেষে মুনাজাতে শরীক হন। নামাজের পর খুদবা পাঠ করেন সম্মিলিত ওলামায়ে পরিষদের জনৈক বুজুর্গ ও আলেম। হাজার হাজার মুসুল্লির বৃষ্টির জন্য আকুতিতে, কান্নায় নিমিষেই ভারি হয়ে ওঠে প্রচন্ড তাপদাহের গরম বাতাস। মানুষ নিজের ভুলের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সষ্টার অশেষ রহমতের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে সবাই বলতে থাকেন –
“মাবুদ গো, তুমি বৃষ্টি দেও …
গরম কমিয়ে দাও…”

অনেক ছোট ছোট অবুঝ শিশুরাও এই প্রচন্ড গরমে এসে সৃষ্টার কাছে হাত তুলেছে। কত তরুন যুবক বয়স্ক মানুষ অঝোরে ফেলেছে চোখের পানি। সৃষ্টার বিশালতার কাছে বৃষ্টির পানির জন্য এত মানুষের মহামূল্যবান চোখের পানির যে আকুলতা, বৃষ্টির প্রত্যাশা ও এত ভয়ানক গরম কমানোর যে আকুতি।
যে কোন সময়ে আকাশ কালো হয়ে টুপ টুপ বৃষ্টির রিনি ঝিনি শব্দের সাথে সাথেই প্রকৃতি পরিবেশ ও মানুষের দিল নিমিষেই ঠান্ডা হয়ে যাবে। এই প্রত্যাশাই দেশবাসীর। সবুজবাগের সালাতুল ইসতিসকার নামাজে অংশ নেয়া প্রতিটি মানুষের।


মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি